৮ দফা দাবি শোনার পর কী কথা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, কী কী পরামর্শ চাকরিহারাদের
যোগ্য কারও চাকরি যেতে দেব না! ৮ দফা দাবি শোনার পর কী কথা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, কী কী পরামর্শ চাকরিহারাদের
নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, যোগ্য কারও চাকরি তিনি বাতিল হতে দেবেন না। আদালতের রায়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
কোনও যোগ্য প্রার্থীর চাকরি বাতিল হতে দেবেন না, সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠক থেকে এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে। যদি আদালতে সমস্যার সমাধান না-হয়, আইন মেনেই তিনি ‘যোগ্য’দের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবেন। আপাতত স্কুলগুলিতে চাকরিহারাদের স্বেচ্ছায় পরিষেবা (ভলান্টারি সার্ভিস) চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বৈঠক শেষের কিছু ক্ষণের মধ্যেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। রায়ের ‘মডিফিকেশন’ চেয়ে তাদের আবেদন, যত দিন না নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে, অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ যত দিন না সম্পূর্ণ হচ্ছে, তত দিন ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের চাকরিতে বহাল রাখা হোক।
এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। এই চাকরিহারাদের একাংশের সঙ্গে সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠক করেন মমতা। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসেরা। মমতার সামনে মঞ্চে উঠে আট দফা দাবি পড়ে শোনান চাকরিচ্যুতদের প্রতিনিধিরা। নিজেদের অবস্থান জানিয়ে রাজ্য সরকারের সাহায্য চান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, আগে যোগ্যদের সমস্যার সমাধান করবেন। তার পর যাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, তাঁদের বিষয়টিও তিনি দেখবেন।
চাকরিহারাদের আট দফা দাবি
সঠিক তথ্য ও নথি নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন, তাঁর বেঞ্চে রিভিউ পিটিশন দেওয়া যাবে না।
রায় পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-হওয়া পর্যন্ত কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্তের চিঠি দেওয়া যাবে না। স্বমহিমায় চাকরিতে বহাল রাখতে হবে।
এই সময়ের মধ্যে নতুন করে পরীক্ষার কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না। পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে যেতে চাইছেন না চাকরিহারারা।
যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক করে, যোগ্যদের পরিচ্ছন্ন তালিকা নিয়ে রিভিউ প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
সকল যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ করতে হবে।
সব বিরোধী দল চাকরিহারাদের প্রতি সহমর্মী। তাদের নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের আবেদন।
আদালতে দক্ষ আইনজীবীর অভাব বোধ করেছেন চাকরিহারারা। তাঁদের পক্ষে দক্ষ আইনজীবীর ব্যবস্থা করে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
মমতার আশ্বাস
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, সেই যোগ্য প্রার্থীদের রাজনৈতিক রং না-দেখেই পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘আদালতের রায়ে আমার হৃদয় পাথর হয়ে যাচ্ছে। আমি লাল-নীল-গেরুয়া কোনও রং দেখব না। তাতে আমাকে ওরা জেলে ভরলে ভরুক। আমরা সব সময় চাই, কোনও যোগ্য ব্যক্তির চাকরি যেন না-যায়।’’ যোগ্যদের কারও চাকরি কেড়ে নিতে দেবেন না, চ্যালেঞ্জ করে জানান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমি বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।’’ যোগ্যদের জন্য বিকল্প বন্দোবস্তের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কোনও রাখঢাক নেই। আইন অনুযায়ীই যা করার করব। পথের মধ্যে থেকেই পথ খুঁজে নিতে হবে।’’ কিন্তু বিকল্প কী ব্যবস্থা করবেন, তা এখনই খোলসা করতে চাননি মমতা। জানিয়েছেন, আগে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত আবেদন জানাবে। রায়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে শীর্ষ আদালতের থেকে। সেখানে সুরাহা না-মিললে বিকল্পের পথে হাঁটবে সরকার। মমতা বলেন, ‘‘আদালতের কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাইব। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে, যাঁরা স্কুলে পড়াতেন, তাঁদের জন্য আদালতের ব্যাখ্যা কী। স্কুল কে চালাবেন? বাকি কাজ কে চালাবেন? কাউকে না খাইয়ে মারার অধিকার তো কারও নেই। চাকরি দিতে পারবেন না, আমার অনুরোধ তাঁরা যেন চাকরি কেড়ে না নেন। তার পর শিক্ষা দফতর যা করার করবে।’’
Comments