One Nation One Election | Polity
One Nation One Elections, what is one nation one election, one nation one election india, One Nation, One Election, Polity
পক্ষে ২৬৯, বিপক্ষে ১৯৮! লোকসভায় ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল পেশের জন্য ডিভিশনে জয় কেন্দ্রের
বিল পেশের জন্য ডিভিশনে প্রথমে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম’ এবং তার পরে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি হয়। এই প্রথম নতুন সংসদ ভবনে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম’ ব্যবহার করা হল।
শেষ পর্যন্ত বিরোধী পক্ষের তোলা ‘ডিভিশনের’ দাবি মেনে ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল পেশ নিয়ে মঙ্গলবার ভোটাভুটি হল লোকসভায়। বিলের পক্ষে ভোট দিলেন সরকারপক্ষের ২৬৯ জন সাংসদ। বিপক্ষে ১৯৮ জন। ভোটাভুটির পরে এক ঘণ্টার জন্য মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘এক দেশ এক ভোট’ বিলের খসড়া নিয়ে সংসদের যৌথ কমিটিতে আলোচনা চান। বিরোধী সাংসদদের বক্তব্য, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোতেই আঘাত হানবে। এর মাধ্যমে একনায়কতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা হচ্ছে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোই আঘাত করবে। বিজেপি কী ভাবে এই বিল লোকসভায় পাশ করাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ডিএমকে। স্ট্যালিনের দলের সাংসদ টিআর বালুর বক্তব্য, “এই সরকারের যখন দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নেই, তারা কিসের ভরসায় এই বিল পেশ করছে সংসদে?” আপত্তি জানান মিম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসিও।
বিল পেশের জন্য প্রথমে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম’ এবং তার পরে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাভুটি হয়। এই প্রথম নতুন সংসদ ভবনে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম’ ব্যবহার করা হল। প্রসঙ্গত, বিরোধীদের আপত্তির মাঝেই মঙ্গলবার লোকসভায় ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত বিল পেশ করে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল এ সংক্রান্ত ১২৯তম সংবিধান সংশোধনী বিল এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আইন (সংশোধনী) বিল সংসদের নিম্নকক্ষে পেশ করেন। এর পরে কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল ডিভিশনের দাবি তোলে। এ ক্ষেত্রে সংসদীয় বিধি মেনে কোনও বিল নিয়ে বিতর্কের আগে ভোটাভুটি করতে হয়।
প্রসঙ্গত, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মাঝেই গত ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্ট অনুমোদিত হয়েছিল। ‘এক দেশ এক ভোট’ কার্যকরের দিশানির্দেশিকা খুঁজতে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছিল মোদী সরকার। লোকসভা ভোটের আগেই গত ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে একসঙ্গে লোকসভা এবং সব ক’টি বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্টটি জমা দিয়েছিল কোবিন্দ কমিটি। সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কমিটির অন্য সদস্যেরা।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয়, সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটুকু বৈচিত্রের সম্ভাবনা রয়েছে, বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের মুখে তা ভেঙে পড়বে বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিজেপির অঙ্ক হল, শুধু লোকসভা ভোট হলে বিরোধী দলগুলির পক্ষে আসন সমঝোতা করা সহজ হবে। কিন্তু একই সঙ্গে বিধানসভা ভোট জুড়ে দিতে পারলে কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগী আঞ্চলিক দলগুলির বিরোধ অনিবার্য। বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, পরবর্তী পর্যায়ে এই নীতিতে হেঁটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে দিয়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা ভোটকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে বলেছিলেন, বিভিন্ন মঞ্চে আলোচনার পরেই কোবিন্দ কমিটির রিপোর্ট অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিত ছিল, সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হতে পারে। এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মতামত নিয়েছে মোদী সরকার। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ। বিশেষত বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির আশঙ্কা, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর হলে লোকসভার ‘ঢেউয়ে’ বিধানসভাগুলি ‘ভেসে যাবে’।
মন্তব্যসমূহ